সুইৎজারল্যান্ড ছবির মতো সুন্দর এই শহরের প্রায় ৭০ শতাংশই ঘিরে রেখেছে আল্পস্ পর্বতমালা। শুধুমাত্র পর্যটন কেন্দ্রই নয় সুইজারল্যান্ডের আইনশৃঙ্খলা, সভ্যতা-ভদ্রতা, অর্থনীতি, রাজনীতি, শান্তি, শিক্ষা, যোগাযোগ সব কিছুর বিচারেই এই দেশে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা পেয়েছে। আর এই দেশেরই উত্তর পশ্চিম অংশে রয়েছে বিশ্বের এক ‘একাদশ আশ্চর্য’। আর তার নাম সোলোথার্ন। সোলোথার্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যেমন অতুলনীয় তেমনই এই শহরটির মধ্যে এমন কিছু নিদর্শন আছে যা আপনাকে বিস্ময়ে হতবাক করে তুলবে। সোলোথার্ন শহরটিতে আছে ১১টি জাদুঘর, ১১টি গির্জা, ১১ ঝরণা সহ আরও অনেক কিছু। তবে এখানকার যাই নিদর্শন আপনি দেখুন না কেন,শহর জোড়া শুধুই এগারো গেরো।
সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখ, জেনেভা ইত্যাদি বেশ কয়েকটি বড় বড় শহর থেকে ট্রেনে চেপে খুব সহজেই সোলোথার্ন পৌঁছোনো যায়। শহরে ঢুকেই প্রথমে থমকে যান দূর দুরান্ত থেকে আগত পর্যটকরা। কারণ সোলোথার্নের প্রধান টাউন স্কোয়্যারে যে ঘড়িটি হয়েছে সেটি থেকেই শুরু হয় শহরের ‘একাদশ রহস্য’। শহরের মূল কেন্দ্রের ঘড়িটিতে রয়েছে মাত্র ১১টি সংখ্যা। ১২ সংখ্যা বিশিষ্ট ঘড়ির থেকে এই ঘড়ির একটি সংখ্যা কম। মানে এই ঘড়িতে কখনও ১২টা বাজে না। সতী বিশ্ববাসীর কাছে এক বিস্ময়ের উদ্রেক ঘটায়।
২০০০ বছর আগে রোমানরা এই শহরের পত্তন করেছিলেন। যদিও তখন এতটা জনপ্রিয় ছিল না ওই শহর। তবে যত দিন গিয়েছে এই শহরের সঙ্গে
লোকগাঁথা বা ইতিহাস যাই বলুন না কেন ১১ সংখ্যাটি কিন্তু সোলোথার্নের ইতিহাসের সঙ্গে কাকতালীয়ভাবে জড়িয়ে গেছে। ১১ সংখ্যাটি এই শহরটির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত। শহরটির ১১ এর মধ্যেই নিজেকে বেঁধে রাখার কারণ গুলি হল ১২১৫ সালে এই সোলোথার্ন শহরে কাউন্সিলর নির্বাচনে ১১ জনকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। ১৪৮১ সালে সোলোথার্নকে সুইস কনফেডারেশনের ১১ তম প্রদেশ হিসেবে যুক্ত করা হয়। সেই সময় শহরের রক্ষাকর্তা হিসেবে ১১ জনকে নিয়োগ করা হয়।এরপর ১৫ শতকের শুরুর দিকে নির্মাণ করা হয় সেইন্ট আরসু গির্জা। এ কথা শুনে অবাক হবেন গির্জাটিতে ছিল ১১টি দরজা, ১১টি জানালা, ১১টি রো, ১১টি ঘণ্টা এবং ১১ ধরনের পাথরের ব্যবহার। তাই এ ধরনের বিভিন্ন রকম এগারোর ব্যবহার এই শহরবাসীর মনে গেঁথে যায় চিরকালের মত একবার ভেবে দেখুন কেউ যদি নিজেদের ১১ বছরের বিবাহবার্ষিকী এই একাদশ আশ্চর্যের শহর সোলোথার্নে কাটাতে পারেন তাহলে সেটা কতটা রোম্যান্টিক হতে পারে। চাইলে এখনই প্ল্যান করে নিতে পারেন। এটা জেনে অবাক হবেন বিশ্বের ১১ তম বিবাহ বার্ষিকী পালন করা বহু দম্পতি এখানে আসেন নিজেদের জীবনের আরও একটি শুভ দিন উদযাপনের উদ্দেশ্যে। তবে এই প্রসঙ্গে বলে রাখি সোলোথার্নে বিলাসবহুল হোটেলের কিছু অভাব নেই। লোকজন সেখানে কম যান বলে ভিড়ও কম হয়। এখানকার স্পেশাল মিষ্টি সোলোথার্নার তর্তের স্বাদ অসাধারন,শুধুমাত্র এই শহরটির সৌন্দর্যই নয় আরে নদীর তীরে অবস্থিত বিলাসবহুল হোটেলগুলিও পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এক কথায় বলতে গেলে ইউরোপের সুইজারল্যান্ড দেশের এই সোলোথার্ন শহরে একাদশের উপস্থিতিতে মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেয়। শুধুমাত্র পর্যটকই নয়, স্থানীয় মানুষরাও এই একাদশের শহরকে ঘিরে গর্ববোধ করে থাকেন।