কেমন আছে রবীন্দ্রনাথের প্রিয় কোপাই নদী?
রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘এখানে আমার প্রতিবেশিনী কোপাই নদী’। লালমাটির দেশ বোলপুরের সাক্ষী এই কোপাই, কোপাই যে নদীটির উপনদী সেই ময়ূরাক্ষী নদীতে বইছে ত্রিকুট পাহাড়ের প্রাণোচ্ছলতা। আঁকাবাঁকা চলনে বহু মানুষের জীবনযাপনের শরিক হয়ে কোপাই শান্তিনিকেতন, লাভপুর আর কঙ্কালীতলা দিয়ে বয়ে চলে এই নদী।
কোপাই এর আঞ্চলিক নাম শাল। প্রেমের টানে কোপাই নামেই বিখ্যাত। তারাশঙ্করের উপন্যাস-জুড়েও কোপাই নদী বয়ে চলেছে নিরন্তর। ‘হাঁসুলি বাঁকের উপকথা’-র বাঁকটি কিন্তু কোপাইয়েরই। মনে পড়ে কোপাই ঠিক তাদের মতো। আপাত শান্ত, কিন্তু মাঝে মাঝে বন্যা আসে খাতে। সব ভাসিয়ে নিয়ে চলে কোপাই।
আজকের দিনে ভালো কী আছে সে? কোপাই আর ভালো নেই। ক্রমে শুকিয়ে আসছে সে, স্বচ্ছতা হারিয়েছে স্রোতনেই, নদীর গতিপথে বহু জায়গায় বালির চর স্থায়ী হয়েছে। আগে বর্ষাকালে কোপাইয়ের রূপ দেখে শিউরে উঠত সবাই। প্রায় বন্য পরিস্থিতি হতো আশেপাশের গ্রামগুলিতে। এখন বর্ষার সময়ে তার সেই ক্রোধ কিছু মাত্রায় স্তিমিত হয়েছে, যা একপ্রকার ভালো, কিন্তু তার কারণ নদীর সংস্কার নয়। নদীর মরে আসা। কোপাইয়ের খাত নিয়ে একটি গবেষণায় জানা গেছে দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হলে কয়েক বছরের মধ্যেই নদীটির আর কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। নদীপথ ও পারিপার্শ্বিক অঞ্চলে ভূমিক্ষয়, আবহাওয়ার গতিবিধি, নদী-পাশের গাছগাছালি, জনবসতি ইত্যাদি মাপকাঠিকে কেন্দ্র করে চলেছিল গবেষণা। তারপর, ফের ২০১৬ সাল। মাঝখানে কোপাই বয়ে গেছে পঁচিশটি বছর ধরে। বিশ্বভারতীরই পঞ্চাশজনের একটি টিম একই বিষয়ে গবেষণার ভার নেয়। তাঁদের মুখ্য উদ্দেশে ছিল মানুষদের সমন্বয় রক্ষা করা। নদীর সংস্কার ও পরিবেশ সংরক্ষণের দিকগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরাই ছিল এই গবেষণার মুখ্যতম কাজ।
নদীর জলে দূষণ বেড়েছে। রুদ্ধ হয়েছে তার স্বাভাবিক গতিপথও। যে কোপাইকে নিয়ে সাধারণ মানুষেরা বছরের নানান সময়ে উৎসবে মেতে থাকতেন, আজ সেই প্রাণে কিছুটা স্তিমিত হয়েছে আলোর উচ্ছলতা। কোপাইয়ের ধারে অসংখ্য ইটভাটা তৈরি হওয়ার ফলে বিপুল প্রভাব পড়েছে তার জীববৈচিত্রে, ফ্লোরা ও ফনায়, পলিমাটির প্রকৃতিতে। নদীর দু’ধারেই বর্জ্য পদার্থের পরিমাণ ভয়াবহরক বেড়েই চলেছে।
রবীন্দ্রনাথ তারাশঙ্কর ওনাদের আদরের কোপাই যদি সচেতনতার আড়ালে থেকে যায় তাহলে বেশ ঘোর বিপদ। কলকল করে বয়ে চলা কোপাই আর নেই তবুও বাংলার সাহিত্য র জুড়ে তার ভূমিকা থেকেই গেছে জীবনভোর।
+ There are no comments
Add yours