কবিগুরুর সৃষ্টি শান্তিনিকেতনের অনন্যভূমি শান্তিনিকেতনের উপাসনাগৃহ। আর তার ঠিক পাশেই রয়েছে “তালধ্বজ“। অনন্য সুন্দর গোলাকৃতির এই মাটির বাড়িটি শান্তিনিকেতন আশ্রমের সৌন্দর্যকে অনেক বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে।
দুর থেকে দেখলে মনে হবে ঠিক যেন তালগাছ এক-পায়ে দাঁড়িয়ে কবি গুরুর কবিতার কথা। শুধু যে দাঁড়িয়ে তা নয়- তার বসার বাসাও আছে। শান্তিনিকেতন গেলে তালগাছ ঘিরে থাকা বাড়িটিকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। মন্দিরের উত্তর-পূর্বদিকে চোখ মেললেই তার সঙ্গে নিশ্চিত সাক্ষাৎ। ‘তালধ্বজ’ নাম নিয়ে তার। শোনা যায় বাড়িটি নাকি তৈরি হওয়ার সময় গাছটিকে কিছুতেই কাটতে দেননি বাড়ির বাসিন্দা। তাই গাছটিই ধ্বজা হয়ে রয়ে যায় শেষমেশ। তাতে অবশ্য ভালোই হয়। বাড়ির নিবাসী ছিলেন যিনি, একমাত্র গাছই হতে পারত তাঁর যথাযথ ধ্বজা। কিন্ত কে সেই মানুষ? তিনি হলেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী এবং প্রকৃতিবিদ তেজেশ্চন্দ্র সেন।
তেজেশচন্দ্র বাবু ঢাকা শহরে বড়ো হয়েছিলেন । সহজপাঠে তাঁর লেখার সঙ্গে পরিচিত আমরা সবাই।শান্তিনিকেতনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ পঞ্চাশ বছরের। প্রথমে ব্রহ্মচর্যাশ্রমের শিক্ষক ও পরে পাঠভবনের। গোটা আশ্রম-চত্বর ঘুরে ঘুরে চলত তেজেশচন্দ্রের ক্লাস। কখন কোথায় ফুল ফোটে, কোন গাছ ফল ধরবে কখন, কার পাতা খসানোর সময় শুরু হল- এইসব শেখাতেন ছাত্রদের। একেবারে হাতেকলমে। শুধু কী তাই, পিঁপড়ে থেকে মৌমাছি, প্রজাপতির প্রতিটি সাজবদল, কোন পাখির কী নাম, কেমন তার ডাক– ছাত্রদের দেখিয়ে চমক লাগিয়ে দিতেন তিনি। সখ করে রবীঠাকুর তাঁর এই প্ৰিয় বন্ধুটির নাম রেখেছিলেন ‘তরুবিলাসী’। আর তাঁর তালগাছ ঘেরা গোলাকার, খড়ের ছাউনির মাটির বাড়িকে নিয়েই বলেছিলেন।
অনেক সময় পুকুরধারে চৌকি নিয়ে বসেও ক্লাস নিতেন তেজেশচন্দ্র বাবু। কিন্তু এই ব্যক্তিগত মতামতকে চিরকালই সম্মান জানিয়ে এসেছে আশ্রম কর্তৃপক্ষ। আর সেকারণেই হয়তো এত নিবিড়ভাবে প্রকৃতিচর্চা চালিয়েও যেতে পেরেছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের সাথে প্রকৃতি তাঁর উপর অসংখ্য লেখার সাক্ষী “তালধ্বজ” নামের বাড়িটি। তার পিছনে থাকা তালগাছ ঠায় দাঁড়িয়ে আজও।
সুমনা আদক
Asia News
https://asianewslive.in
Asia News is a digital news platform that brings Asia to the global online audience.