বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে এক সাহসী মেয়ের গল্প: একটি বিতর্কিত মোড়

কন্যাশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত নাদিয়ার সাহসী কাজটি এক সময় সমাজে প্রশংসিত হলেও, সম্প্রতি তার নিজস্ব বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের পরিবর্তে নিজেই পালিয়ে বিয়ে করার ফলে একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। 17 বছর বয়সী নাদিয়া, যিনি তার বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য একাধিক পুরস্কৃত হয়েছিলেন, বর্তমানে এক নব্য বিতর্কের সম্মুখীন। তার এই পদক্ষেপ শুধু তার খ্যাতিকে বিপন্ন করেনি, বরং তার স্কুল, পরিবারের এবং তার অর্জিত সম্মানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। 

নাদিয়ার জীবন ছিল সাহসিকতার এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এক আর্থিকভাবে সংগ্রামী পরিবারের 10 তম শ্রেণির ছাত্রী হিসেবে, মাত্র 16 বছর বয়সে, তার পরিবার তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু সামাজিক ও পারিবারিক চাপের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, সে তার শিক্ষক ও সহকর্মীদের সহায়তায় তার বিয়ে বন্ধ করে দেয় এবং সমাজে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। 14 আগস্ট, 2024-এ, কন্যাশ্রী দিবসের দিন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সম্মানিত করা হয়। তার সাহসিকতা সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল তার দৃঢ় অবস্থানের জন্য। 

তবে তার জীবন অপ্রত্যাশিত মোড় নিতে শুরু করে। তার সাহসিকতার প্রতীক হয়ে ওঠা নাদিয়া, কিছুদিন পরই বিয়ের জন্য পালিয়ে যাওয়ার এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বিয়ে করার ঘটনা ঘটায়। এই ঘটনায় তার প্রতিক্রিয়া শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, তার স্কুল এবং পুরস্কারের জন্যও সমালোচনার জন্ম দেয়। 

নাদিয়ার স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার গভীর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “যে সাহসিকতার জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছিল, তা এখন তার কর্মের দ্বারা ছাপিয়ে গেছে। এতে আমাদের বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে।” তার স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাবও উঠেছে, এবং তার পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি উঠেছে।

এদিকে, নাদিয়ার বাবা, যিনি তার বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছিলেন, তার মেয়ের কর্মকাণ্ডে অত্যন্ত হতাশ এবং তিনি বলেছেন, “সে আমার মুখ কালো করেছে। তার এই কাজটি আমাদের পরিবারকে লজ্জিত করেছে।” তার সহপাঠী এবং শিক্ষকরা একই মনোভাব পোষণ করছেন। এক সহপাঠী প্রশ্ন করেছেন, “যদি সে বিয়ে করতে চায়, তবে কেন সে তার বিয়ে বন্ধ করার জন্য লড়াই করেছিল? সে নিজের এবং স্কুলের জন্য যে সম্মান অর্জন করেছিল তা এখন সে অপমান করেছে।”

এই ঘটনার পর, বুদ্ধিজীবী মহলেও আলোচনা চলছে। অনেকেই এই ধরনের ঘটনা রোধ করার জন্য সরকারের সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, সরকারকে পুরস্কৃতদের প্রেক্ষাপট এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করা উচিত। 

রাজ্য সরকার, যে মেয়েটিকে পুরস্কৃত করেছে, এখন কঠিন সিদ্ধান্তের সম্মুখীন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বোস এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেননি, তবে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইনের কঠোর প্রয়োগের আহ্বান তীব্রতর হয়েছে।

এক স্কুল শিক্ষক, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, “মেয়েটির গল্প একসময় আশার আলো ছিল, তবে এখন এটি বাল্যবিবাহের মতো গভীর সামাজিক সমস্যা মোকাবেলায় টেকসই শিক্ষা এবং সমর্থনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমাদের আরও চিন্তা করতে শেখায়।” 

নাদিয়ার এই পদক্ষেপ একটি বার্তা দেয় যে, বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করতে শুধু সাহসী হতে হলেই চলবে না, বরং তাকে এক টেকসই সামাজিক এবং শিক্ষাগত সমর্থনও প্রয়োজন, যা তাকে সুস্থ, সচেতন এবং শক্তিশালী সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে প্রেরণা যোগাবে

Asia News https://asianewslive.in

Asia News is a digital news platform that brings Asia to the global online audience.

You May Also Like

More From Author