বিশ্ব ব্যাঘ্রদিবস :

বিশ্বের একমাত্র বাঘ-অধ্যুষিত নোনাজলের উদ্ভিদ-অরণ্য সুন্দরবন। পানীয় জলবিহীন বিচরণভূমির এই প্রতিকূল প্রতিবেশ সাঙ্গীকরণের কারণে এখানকার বাঘ স্বকীয় নানা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়েছে। হয়তো বা নোনাজল পানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ার কারণে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনও ঘটে গেছে তার মধ্যে।

#SundarbansRoyalTigerAdaptation#asianews

বাঘের স্বাভাবিক প্রবণতা হল খাদ্যের ঘনত্ব অনুসারে নিজের বিচরণক্ষেত্র নির্ধারণ করা। সেখানে অন্য পুরুষ বাঘকে তো নয়ই, প্রজননকালে এক বা একাধিক বাঘিনিকেই কেবলমাত্র কয়েকদিনের জন্য বিচরণের অনুমতি দেয়। সুন্দরবনের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য হল ছোট ছোট অসংখ্য দ্বীপের সমাহার। এই ছোট ছোট দ্বীপের আঙিনায় শিকার প্রাণীর ঘনত্ব বাঘের প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম। সে কারণে দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে বাঘকে হামেশাই ঘুরে বেড়াতে হয়। স্রোতের তীব্রতার তারতম্য, কুমিরকে উপেক্ষা করেও সুন্দরবনের বাঘ তাই আজ এক দক্ষ সাঁতারুতে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত সাঁতার, কখনও ঘন গভীর কাদামাটি, শুলো বিস্তৃত বনপথে চলাফেরা ইত্যাদি নানা কারণে তার পেশিসমূহের বর্ধিতশক্তির বলে গাছে উঠে পড়াও সে রপ্ত করেছে অনায়াসে। এই প্রজাতির বাঘ অন্য কোনও অরণ্যে এমন ভাবে গাছে ওঠা রপ্ত করেছে, এমন উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায়নি। গাছে উঠে বাঁদর বা মাচায় থাকা মানুষকে শিকার, কখনও আত্মরক্ষার প্রয়োজনে এমনকী তালগাছ বেয়ে উঠে পড়া তার কাছে স্বাভাবিক। শৌর্য-বীর্য, বুদ্ধি আর রাজকীয় চালচলনেই ইনি প্রকৃতই দ্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ভয়ানক এদের নখ-দাঁতের ব্যবহার। থাবার প্রধান চারটি নখের গঠনগত সুবিধার কারণে শিকার প্রাণীর দেহে থাবার আঘাত গভীরে ঢুকে যায় আর বড়শিতে মাছ আটকানোর মতো যত শক্তিশালী শিকার প্রাণীই হোক না কেন, অবলীলায় তাকে আটকে রাখতে পারে। মুহূর্তে নেমে আসে অত্যন্ত শক্তিশালী মাংসপেশি সমন্বিত ছোট কিন্তু বলিষ্ঠ চোয়ালের খদন্তের অমোঘ কামড় এবং অবধারিত মৃত্যু। থাবার নীচে নরম প্যাড সাহায্য করে নিঃশব্দ অনুসরণে, আর তাৎক্ষণিক মুহূর্তে তীর গতিময় বজ্রকঠিন আক্রমণ যে কোনও প্রাণীকেই মুহূর্তে খাদ্যে পরিণত করে ফেলে। অতি সক্রিয় শ্রবণেন্দ্রিয় আর শক্তিশালী দৃষ্টির সাহায্যে পারিপার্শ্বিক সম্পর্কিত যে কোনও তথ্য দ্রুত বিশ্লেষণ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সুন্দরবনের বাঘ অত্যন্ত পারদর্শী। তুলনামূলকভাবে এদের ঘ্রাণশক্তি অনেকটাই দুর্বল।

আজ জলবায়ু পরিবর্তনের ডঙ্কা বেজে উঠেছে এবং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে তীব্রগতিতে। সুন্দরবনও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানে সমুদ্রের জলতলবৃদ্ধি সামান্য হলেও অতি ধীরগতিতে বেড়ে চলেছে, তবে সুখের কথা বাদা সুন্দরবন আজও পলির আস্তরণে অতিমাত্রায় সক্রিয়। এবং দ্বীপভূমিতে পলি জমার হার জলতলবৃদ্ধির আনুপাতিক হারের থেকেও বেশি। সুন্দরবনের বাঘের আছে বিস্ময়কর অভিযোজন করার দক্ষতা যা দিয়ে এই অস্বভাবিক পরিবেশের আবাসস্থলকে সে আত্মীকরণ করে চলেছে প্রতিনিয়ত, ঠিক তেমন ভাবেই আজ বা আগামীদিনের জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে,এটাই ধারণা।

Asia News https://asianewslive.in

Asia News is a digital news platform that brings Asia to the global online audience.

You May Also Like

More From Author

+ There are no comments

Add yours