ভোটের শিরোনামে মেদিনীপুর
লোকসভার ভোটের ময়দানে বেশ গুছিয়ে নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলি। ভোটের আবহে প্রথম দিন থেকেই খবরের শিরোনাম দখল করেছে মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র। ২০১৯ সালে দিলীপ ঘোষ প্রার্থী হয়েছিলেন মেদিনীপুরে। মেদিনীপুর তো বটেই, তাঁর নেতৃত্বে আরও ১৭ আসনে রাজ্যে পদ্মও ফুটেছিল, এই বার লোকসভা ভোটের প্রার্থী অন্য মুখ অগ্নিমিত্রা পাল। অগ্নিমিত্রা পাল কে প্রায় সকলেই চেনেন।
ব্রিটিশ শাসনের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিলো এই মেদিনীপুর।স্বাধীনতার পর থেকে মূলত কংগ্রেস রাজ দেখেছে মেদিনীপুর মাঝে দু একটা পরিবর্তন ছাড়া মেদিনীপুরের মাটিতে পাকাপাকি ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো বাম শাসন।
২০১৪ সালে বাম শাসনের পতন ঘটলে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার ভোটে জয়ী হন তৃণমূলের প্রার্থী সন্ধ্যা রায়।শোনা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই ক্যারিশ্মায় জিতিয়ে নিয়ে আসেন সন্ধ্যা রায়কে। পরবর্তী কালে এখানে প্রার্থী হন মানস ভুঁইয়া। শেষমেশ আবারও মেদিনীপুরে পদ্ম ফোটান তৎকালীন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ৮৯ হাজার ভোটে পরাজিত হন মানস ভূঁইয়া। রাজ্যের অধিকাংশ আসনে ২০০৯ সাল অবধি প্রায় কোনও অস্তিত্ব ছিল না বিজেপির কিন্তু মেদিনীপুরে বহুবার মূল বিরোধী হয়ে উঠেছে গেরুয়া শিবির।
২০১৯ এ ভোটে বিজেপি পায় ৪৮.৬২% ভোট। তৃণমূল এর ছিল ৪২.৩১% ভোট, বামেদের ঝুলিতে ৪.৪২% ভোট। আর কংগ্রেসের অবস্থা তখন শোচনীয়, জোটে মাত্র ১.৪৮% ভোট।
এই বার লোকসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী করেছে অভিনেত্রী জুন মালিয়াকে। ২০২২ সালে মেদিনীপুর বিধানসভায় জিতে বিধায়ক তিনি আর বিজেপি প্রার্থী করেছে অগ্নিমিত্রা পালকে।এখানে দুজনেই বেশ শক্তপোক্ত মহিলা প্রার্থী। বামেরা প্রার্থী করেছে বিপ্লব ভট্টকে।
রাজনীতিবিদ দের মতে মেদিনীপুরে যুযুধান দুই ফুল। কারণ এখন বামেদের কাছে সম্বল বলতে সিপিআই আর কংগ্রেসের ভোট মিলিয়ে সর্ব সাকুল্যে ৫ শতাংশ।
এদিকে মেদিনীপুরে রয়েছে আদি এবং নব্য বিজেপির দ্বন্দ্ব। জুন মালিয়ার নাম প্রার্থী হিসাবে ঘোষণার পরে তাঁকে দু’লক্ষ ভোটে হারানোর কথা বলেছিলেন দিলীপ ঘোষ। দিলীপের জায়গায় অগিমিত্রা পালের নাম মেদিনীপুরের প্রার্থি হিসাবে ঘোষণার পরেই তিনি গিয়েছিলেন অধিকারী বাড়িতে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি দিলীপকে প্রার্থী না করার পিছনে নাকি শুভেন্দু অধিকারীর হাত রয়েছে। যদিও সেই দ্বন্দ্ব সামনে আনতে নারাজ বিজেপি। দিলীপের বক্তব্য, ‘মেদিনীপুরের মাটি তৈরিই রয়েছে। আমি সেটা করে রেখেছি। মানুষ ভোট দেবেন মোদীজিকে দেখে।’ আর অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘দিলীপদার আশীর্বাদ নিয়েই এসেছি। তিনিই আমায় মহিলা মোর্চার দায়িত্ব দিয়েছিলেন।’
ভোটের অঙ্ক একটু জটিল এই কেন্দ্রে। কারণ ২০১৯ ভোটে দিলীপ ঘোষকে এগিয়ে রেখেছিল ৬টি বিধানসভা। তৃণমূল এগিয়েছিল কেবল খড়্গপুরে। কিন্তু ২০২১ সালে সেই হিসাব বদলে যায়। খড়্গপুর সদরে জয় পায় বিজেপি, বাকি ৬ আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। এখন প্রশ্ন দিলীপের ছেড়ে আসা মেদিনীপুর ধরে রাখতে পারবেন তো অগ্নিমিত্রা নাকি আবারও ঘাসফুল ফোটাবে জুন মালিয়া। এদিকে “দিদির আশীর্বাদ নিয়ে এসেছি ভোটে আমি জিতবোই ” এমনটাই বলেন অভিনেত্রী জুন মালিয়া। সবমিলিয়ে এবছর লোকসভায় মেদিনীপুরের জনতা কি রায় দেন সেটাই দেখবার বিষয়।
ভোটের পরীক্ষায় মেদিনীপুর
