মনমোহন সিংয়ের পরমাণু চুক্তি: ভারতের ভূরাজনীতির নতুন দিগন্ত
১৯৯৮ সালে ভারতের পরমাণু পরীক্ষার পর, ভারতকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সি (IAEA) এবং পশ্চিমী দুনিয়ার চাপে পড়তে হয়েছিল। তবে, সেই সময়ের বিরোধী নেতা মনমোহন সিং পরবর্তী সময়ে যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা ভারতকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুনভাবে পরিচিত করে তোলে। ২০০৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মনমোহন সিং অত্যন্ত সচেতনভাবে আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের দিকে মনোনিবেশ করেন। তিনি জানতেন, একটি অসামরিক পরমাণু চুক্তি ভারতের শক্তি চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে এবং ভারতকে বিশ্বের পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থানে পৌঁছাবে।এই চুক্তি বাস্তবায়নের পথে নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। আমেরিকা তখন পাকিস্তানের বন্ধু, আর ভারতের সখ্য রাশিয়ার সঙ্গে ছিল। কিন্তু মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক পদক্ষেপ শুরু হয়, যা কেবল আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়ে, ভারতকে এক নতুন ভূরাজনৈতিক শক্তিরূপে প্রতিষ্ঠিত করে।২০০৫ সালে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এবং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যৌথভাবে পরমাণু চুক্তি ঘোষণার পর, তিন বছর সময় লেগেছিল চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য। এই সময়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সি (IAEA) থেকে অনুমোদন পাওয়া ছিল অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সময়, বামফ্রন্টের বিরোধিতাও সরকারের জন্য এক বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে, মনমোহন সিং দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়ে সরকারকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এবং পরমাণু চুক্তি চূড়ান্ত করতে সফল হন। এই চুক্তি ভারতের পরমাণু শক্তি স্থাপনার ওপর নিষেধাজ্ঞাগুলি তুলে দিয়েছিল এবং বিশ্বকে দেখিয়েছিল যে ভারত একটি বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হওয়ার পাশাপাশি, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এই চুক্তি ভারতকে একটি নতুন আন্তর্জাতিক অবস্থানে নিয়ে যায়, যা আজকের ভারতের ভূরাজনৈতিক সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করেছে।আজ, মনমোহন সিংয়ের প্রয়াণের পর, আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ভারত এবং আমেরিকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁর অবদানের প্রশংসা করেছেন। ওই পরমাণু চুক্তি ভারতকে বিশ্ব কূটনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছে। আজকের বিশ্বে, যেখানে ভারত প্রায় সব বড় দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে, তা সম্ভব হয়েছে সেই চুক্তির ভিত্তিতেই, যা মনমোহন সিংয়ের দূরদর্শী নেতৃত্বে সম্ভব হয়েছিল।