মানিকদার সৃষ্টির কান্ডারি
শোনা যায় তাঁর পছন্দের কয়েকটি বস্তুর মধ্যে ক্যামেরা ছিল অন্যতম। রায় মশাই ক্যামেরা কে খুব ভালোবাসতেন তাঁর অসিস্টেন্ট নিমাই ঘোষ ও নাকি ট্যাক্সির মধ্যে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন একটি ক্যামেরা। সত্যজিৎ রায় ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’-এর শুটিং করছিলেন রামপুরহাটে। নিমাইবাবু গিয়েছিলেন দেখতে। তাঁর তোলা ছবি গুলো দেখে রায় বাবু একদিন বললেন কে ছবি তুলেছে? বংশীবাবু বললেন, নিমাই তুলেছে। তারপর সত্যজিৎ রায় নিমাইবাবুকে ধাক্কা দিয়ে বললেন, “আপনি তো মশাই আমার অ্যাঙ্গল মেরে দিয়েছেন। “সেই শুরু তার পর একদিন একটা ফোন পেলেন নিমাইবাবু ফোনের ওপারে একটা ভারী কণ্ঠে বললেন, ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’ করছি। তাড়াতাড়ি চলে এসো।
ব্যাশ,আর পিছনে ফিরে দেখতে হয়নি নিমাই ঘোষকে। শুরু হোলো পথ চলা যদিও নিমাই ঘোষ আসলে নেপথ্যেই রয়ে যেতে চেয়েছিলেন বরাবর। যে কারণে নিজের মতো সত্যজিৎবাবুকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। রঙিন ছাড়াই সাদা-কালোতেই তিনি বেশিরভাগ ছবি তুলেছেন তাঁর ক্যামেরায়। সাদা-কালোর কল্পনাদীপ্ত বিভাজন, ধূসরের নানা মাত্রার বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি ও পরিবেশের মায়াবী এক পরিমণ্ডল গড়ে তোলার প্রয়াস ছিল তাঁর মধ্যে। নিমাইবাবুর সখ ছিল ছবি তোলা, বাস্তবতার সাথে কল্পনায় আঁকা ছিল তাঁর ছবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কোথাও তিনি দৃশ্যকে ভাঙেননি বরং গড়েছেন নতুন করে। অথচ উপস্থাপনার গুণে সেই স্বাভাবিকতায় গভীরতর মাত্রায় ব্যঞ্জিত হয়েছে বারংবার। আলোকচিত্রী হিসেবে নিমাইবাবুর এখানেই সার্থকতা।
সিনেমা ছাড়াও নাটক, মুখাবয়ব, নিসর্গ, আদিবাসী ইত্যাদি বিষয় নিয়েও কাজ করেছেন নিমাই ঘোষ।
অন্তরের গভীরে থাকা বহু মানুষের মুখ, বহু ঘটনা, বহু জানা-অজানা কাহিনি তাঁকে এই অনন্য স্মৃতিকথা লেখার প্রেরণা দিয়েছে বারবার। নিমাই ঘোষ ছিলেন রায় মশাই এর ছায়া সঙ্গী তেমন তাঁর সৃষ্টির আরেক কান্ডারি।
রায় বাবুর সৃষ্টির কান্ডারি তিনি
