রাশিয়ার ‘গুপ্তচর’ তিমির মৃত্যুতে ক্রমেই বাড়ছে রহস্য, ‘বিশেষ তথ্য’ দিল নরওয়ে

যুগযুগান্ত ধরে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ উঠেছে মানুষের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই অভিযোগ যদি ওঠে আপাতশান্ত এক প্রাণীকে ঘিরে। একটি সাদা রঙের বেলুগা তিমি।অতল সমুদ্রের এই প্রাণী শিরোনামে এসেছিল কারণ এটি নাকি সাধারণ কোনও তিমি নয়! বলা হত, সে রাশিয়ার গুপ্তচর। নরওয়ের ‘হল’ এবং রাশিয়ার ‘ভ্লাদিমির’ এই দু’টি শব্দ জুড়ে বেলুগা তিমিটির নামকরণ করা হয়েছিল ‘হলদিমির’।
অগস্টের শেষে এই বিখ্যাত বেলুগা তিমির দেহ উদ্ধার হয়েছিল নরওয়ের সমুদ্রে। আর তার মৃত্যু ঘিরেও শুরু হয়ে গিয়েছিল নানা ধোঁয়াশা। মৃতদেহ উদ্ধারের পর মৃত্যুর কারণ নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়। কারণ তিমিটির মৃতদেহ উদ্ধারের সময় তার গায়ে গুলির চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে বলে শোরগোল ওঠে বিভিন্ন মহলে।তবে সব জল্পনাকে অস্বীকার করে নরওয়ে পুলিশ ঘোষণা করেছে কোনও গুপ্তঘাতকের গুলি নয়, সংক্রমণেই মারা গিয়েছে ‘হলদিমির’। ব্যাক্টিরিয়া সংক্রমণের সম্ভাব্য কারণ হল মুখে ক্ষত। দাঁতে বা মুখে আটকে থাকা ছোট কাঠের টুকরো আটকে থেকেই ক্ষত তৈরি হয়েছিল বেলুগা তিমিটির এমন সম্ভাবনার কথাই জানিয়েছে নরওয়ে প্রশাসন।এর আগে প্রাণী সংরক্ষণ সংস্থা এনওওএইচ এবং ওয়ান হোয়েল দাবি করেছিল যে, তিমিটিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং তারা পুলিশ অভিযোগও দায়ের করে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামে নরওয়ে প্রশাসন। নরওয়ের মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে স্যান্ডনেসের পশু চিকিৎসা সংস্থা একটি ময়নাতদন্ত করে। সেখানে তিমিটির মুখে ৩৫ সেন্টিমিটারের একটি কাঠের টুকরো পাওয়া যায় বলে ময়নাতদন্তে বলা হয়েছে।নরওয়ে পুলিশ কর্মকর্তা আমুন্ড প্রিডে রেভেইম জানিয়েছেন যে, মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ হল ব্যাক্টিরিয়া সংক্রমণ, যা ওই কাঠের টুকরোটির আঘাতে মুখে ক্ষত সৃষ্টির ফলে হয়েছে । তিমিটির দেহে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে ময়নাতদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে। বুক এবং মাথার এক্সরে করে দেহে কোনও রকম ধাতব বস্তুর উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়নি।পুলিশও দেহে বুলেটের কোনো চিহ্ন খুঁজে পায়নি, তাই আর কোনও তদন্ত করা হয়নি বলে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে।

নরওয়ের সুদূর উত্তর উপকূলে ফিনমার্ক অঞ্চলে তিমি হলদিমিরকে প্রথম দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে। এই তিমিটি লম্বায় ছিল ১৪ ফুট। ওজন প্রায় ১২০০ কেজি। বেলুগা তিমিদের সাধারণত সুমেরু অঞ্চলের দূর সমুদ্রেই দেখা যায়। নির্জনে থাকতেই পছন্দ করে বেলুগারা।কিন্তু স্বভাবের দিক থেকে হলদিমির ছিল স্বতন্ত্র। মানুষের সঙ্গে মেশার খুবই আগ্রহ ছিল তার। একাধিক সমুদ্র উপকূলে হলদিমিরকে পর্যটকদের সঙ্গে খেলাধূলা করতেও দেখা গিয়েছে। তার মুখে খাবার ছুড়ে দিতেন উৎসাহী পর্যটকেরা।
বেলুগারা সাদা তিমি নামেও পরিচিত। কণ্ঠের আওয়াজ বা ডাকের জন্য এরা বিখ্যাত। পূর্ণবয়স্ক বেলুগা তিমির সারা শরীর সাদা হলেও বাচ্চা অবস্থায় গায়ের রং থাকে গাঢ় ধূসর। মাথা সামনের দিকে উঁচু। তাই এদের আলাদা করে চিনে নিতে কোনও বেগ পেতে হয় না।

Asia News https://asianewslive.in

Asia News is a digital news platform that brings Asia to the global online audience.

You May Also Like

More From Author