রেশন দুর্নীতির তদন্ত: ইডির বিরুদ্ধে আদালতের তীব্র প্রশ্ন
বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারি, রেশন দুর্নীতির তদন্ত নিয়ে ফের মুখোমুখি হলেন ইডি (ইনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট) এবং বিচারক প্রশান্ত মুখোপাধ্যায়। তদন্তের প্রায় দেড় বছরের মাথায়, তদন্তকারী সংস্থা ইডির বিরুদ্ধে নতুন ধরনের প্রশ্ন উঠেছে আদালতের সামনে। বিশেষ করে, প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ভূমিকা নিয়ে রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেছেন আদালত।অভিযোগের ভিত্তি কী? ইডি দাবি করছে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকই ছিলেন রেশন দুর্নীতির ‘কিংপিন’ এবং তাঁর নির্দেশেই গোটা দুর্নীতির চক্র কাজ করেছে। তাঁদের মতে, মল্লিকের নির্দেশে রেশন বণ্টনে দুর্নীতি চলেছে এবং সেই টাকা পাচার হয়েছে। তবে, বিচারক সাফ জানিয়ে দেন, যদি এই দুর্নীতি চুরি দিয়ে শুরু হয়ে থাকে, তবে দুর্নীতির তদন্ত কেন চলছে? এবং যদি সেটা দুর্নীতি হয়, তবে এখন পর্যন্ত কোনও সরকারি আধিকারিক বা ডিস্ট্রিবিউটরকে কেন গ্রেপ্তার করা হয়নি?গোড়ায় ফিরে গিয়ে তদন্তের নির্দেশ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জামিনের আবেদন শুনানিতে, বিচারক প্রশ্ন করেন, “রেশন দুর্নীতি যদি চুরির মাধ্যমে শুরু হয়ে থাকে, তবে সেই চুরি কেন দুর্নীতির মামলা বলে পরিচিত হচ্ছে?” তিনি আরও বলেন, “গঙ্গাসাগর নয়, গঙ্গোত্রীতে গিয়ে তদন্ত করা উচিত, কারণ রেশন দুর্নীতির শুরু কোথায় তা তদন্ত করতে হবে।” বিচারক এর মাধ্যমে ইডির কার্যকলাপে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং তাদেরকে তদন্তের প্রাথমিক স্তরে ফিরে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন।ইডির দাবি ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের যুক্তি ইডি দাবি করেছে যে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অধীনে দুর্নীতির চক্র চলেছিল। তারা আরও দাবি করেছে যে, একাধিক সরকারি আধিকারিক এবং ব্যবসায়ীও এই দুর্নীতির অংশ ছিলেন। তবে, বিচারক বলেছেন যে, যদি সত্যিই কোনও চুরি ঘটে থাকে, তবে সেটা অন্যভাবে সুরাহা করা উচিত, এবং সেই কারণে দুর্নীতির তদন্তের প্রমাণের জন্য আরও বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন।পূর্বের তদন্ত ও আদালতের বক্তব্য এদিন, বিচারক আরও বলেন, “যতগুলো এফআইআর দায়ের হয়েছে, তার মধ্যে অনেকেই তদন্তের বাইরে রয়ে গেছেন। সরকারের কাছে যে তথ্য রয়েছে, তা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।” তিনি রেশন দুর্নীতির সাপেক্ষে যে সমস্ত প্রমাণ জমা পড়েছে, তার যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেন, “এই টাকা আসলে রেশন দুর্নীতিরই অংশ কিনা, সেটা কীভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল?”মল্লিকের জামিন আবেদন বিচারকের উক্তি অনুযায়ী, এই মামলা নিয়ে আরও তদন্ত করা প্রয়োজন, আর সেজন্য মল্লিকের জামিন আবেদনের শুনানি ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। ইডি আদালতে আরও তথ্যসহ লিখিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখনো পর্যন্ত বিচারকের তীব্র প্রশ্নের পর, রেশন দুর্নীতি নিয়ে তদন্তে আরও গভীরতা আসবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়। মল্লিকের বিরুদ্ধে চলমান মামলা এবং তদন্তে নতুন মোড় আসবে, এমনটাই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা