ভারতীয় খাদ্য হিসেবে সিঙ্গাড়ার সাথে রবার্ট ক্লাইভের প্রথম সাক্ষাৎ হয়, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সৌজন্যে।
মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র। ১৭৬৬ সালে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভার হালুইকর, কলিঙ্গ তথা বর্তমান ওড়িষ্যা থেকে আগত গুণীনাথ হালুইকরের
ষষ্ঠপুত্র গিরীধারী হালুইকরের স্ত্রী ধরিত্রী দেবী আবিষ্কার করেছিলেন সিঙ্গাড়া। সিঙ্গাড়ার জন্য কৃষ্ণচন্দ্র স্বীকৃতি পেলেও তার প্রধান সৃষ্টিকারী ছিলেন ধরিত্রী দেবী।
শাক্ত সাধক, পরবর্তিকালে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি রামপ্রসাদ, স্বয়ং সন্ধ্যাহ্নিক সেরে প্রতিসন্ধ্যায় বসতেন একথালা সিঙ্গাড়া নিয়ে।
দোলপূর্ণিমার সন্ধ্যায়, মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের দরবার থেকে বাইশটি সুসজ্জিত হস্তী ভেট নিয়ে গিয়েছিলো উমিচাঁদের কাছে – বাইশটি স্বর্ণথালা ভর্তি বাইশশোটি সিঙ্গাড়া। গিরীধারী হালুইকরের স্ত্রী ধরিত্রী দেবী আবিষ্কার করেছিলেন মোহময়ী সিঙ্গাড়া।
সিঙ্গাড়ার জন্য ইতিহাস স্বীকৃতি দিয়েছে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রকে। তাঁর প্রধান সৃষ্টিকারী ছিলে ধরিত্রী বেহারার।
ইংরিজিতে বলে, কমন সেন্স মেকস্ আ ম্যান আনকমন। ধরিত্রীদেবী সাধারণ বুদ্ধি খাটিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন এই অসাধারণ খাদ্যদ্রব্যটির, যেটি সেই ১৭৬৬ সাল থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বাংলা তথা সারা ভারতে।
ঐতিহাসিকদের মতে, এর বহু আগে, নবম শতাব্দীতে পারস্যের অধিবাসীরা যব এবং ময়দার তালের সঙ্গে গাজর কড়াইশুঁটি রসুন ও মাংস মেখে সেঁকে খেতো, যাকে বর্তমান সিঙ্গাড়ার জনক হিসাবে ধরা হলেও, সুদূর পারস্য থেকে ভারতবর্ষে এসেও তাঁরা ময়দার তালে মাংসের কুঁচি ঢুকিয়ে সেঁকেই খেতেন। এরও বহুপরে তাঁরা ভারতবর্ষের উত্তরপূর্ব উপকূলে বিভিন্ন মশলা সহযোগে তৈরি আলুর তরকারি, ময়দার ভেতর ঢুকিয়ে ঘিয়ে ভাজার পদ্ধতিতে চমৎকৃত হ’ন।
ডায়বেটিক পেশেন্টদের ঘন ঘন খিদে পায়।তৎকালীন সময়ে ডাক্তাররা বলতেন অনেকক্ষণ অন্তর একসাথে প্রচুর পরিমানে না খেয়ে, ক্যালোরি মেপে কিছুক্ষণ অন্তর অল্পসল্প খাবার খেতে। খাদ্য রসিকদের কথায় মানতেই হবে সেযুগে ডাক্তারবাবুদের হৃদয় ছিলো বিশাল। সিঙ্গাড়া তে বন্ধকতা ছিল না।
আজকের সময়ে শহুরে অভিজাত পরিবারের বৈঠকখানায় মোটা গদির সোফায় বসা অতিথির পাতে কিংবা প্রত্যন্ত গ্রামের চায়ের দোকানের সামনে নড়বড়ে বাঁশের বেঞ্চে রাখা তেলচিটে কালো ভাঙ্গা বেতের চুবড়ি – বিকেল সাড়ে চারটেই হোক বা সকাল পৌনে দশটা, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের প্রধান হালুইকরের স্ত্রীর উদ্ভাবনটি সর্বত্র সর্বদা সর্বগামী।
ভারতীয় পরিভাষায় এর পরিচিতি অনেক সমশা, শম্ভুজা, সিঙ্গারা আরো কত কি।
সুমনা আদক
সিঙ্গারার ইতিকথা
