আজ উল্টোরথ যাত্রা। গুণ্ডিচাবাড়ি থেকে পুরীর মন্দিরে ফিরছেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। ফুলে-মালায় সজ্জিত ৩টি রথ। গুণ্ডিচা মন্দিরের সামনে ভক্তদের উপছে পড়া ভিড়। এটি বহুদা যাত্রা বলেও পরিচিত। গুণ্ডিচা মন্দির মাসির বাড়ি নামে পরিচিত। এই মাসি মায়ের বোন নয়। আসলে মসী অপভ্রংশ হয়ে মাসি হয়ে গিয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের এক সখীর নাম ছিল পৌর্ণমসী। গুণ্ডিচা আসলে সখী পৌর্ণমসীর কুঞ্জ। যা কুঞ্জবাটি নামেও পরিচিত। ওড়িশাবাসীর কাছে অবশ্য গুণ্ডিচা নামেই বেশি প্রচলিত। গুণ্ডিচাদেবী ছিলেন রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের স্ত্রী। যিনি কৃষ্ণের নীলমাধব রূপকে স্বপ্ন দেখেছিলেন।
স্বাভাবিকভাবেই উল্টোরথ ঘিরেও ভক্তদের প্রবল উন্মাদনা দেখা যাবে। তবে এদিন গুণ্ডিচা মন্দির থেকে জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম পুরীর মন্দিরে পৌঁছনোর পর প্রথা অনুযায়ী মূল মন্দিরে প্রবেশ করবেন না। রথ-সহ বিগ্রহ তিনটি বাইরেই থাকবে। বেশ কিছু আচার অনুষ্ঠান পালনের জন্যই এই প্রথা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। সেই সমস্ত অনুষ্ঠান তিন দিন ধরে চলবে। তারপর মহা সমারোহের সঙ্গে তাঁদের মন্দিরের রত্নবেদিতে তোলা হবে।
বাড়ি ফেরার পর একাদশী তিথিতে তিন বিগ্রহ সেজে উঠবেন সোনার গয়নার সাজে। প্রতি বছর এভাবেই সাজানো হয় তিন দেবতাকে। যাকে বলা হয় ‘সোনাবেশ’। এরপর দ্বাদশীর সন্ধ্যায় শুরু হবে ‘অধরপনা’ উৎসব। রীতি অনুযায়ী প্রভু জগন্নাথদেবকে শরবত খাওয়ানো হবে। আর তৃতীয় দিন অর্থাৎ ত্রয়োদশীতে জগন্নাথদেবের উদ্দেশে ভোগ হিসেবে কয়েকশো হাঁড়ি রসগোল্লা নিবেদন করা হবে। যা ‘রসগোল্লা উৎসব’ নামে পরিচিত। উল্টোরথের পর অন্যতম সেরা আকর্ষণ এই ‘রসগোল্লা উৎসব’। এরপর ‘নীলাদ্রিবিজয়’ উৎসবের মাধ্যমে তিন দিনের রীতি শেষ হবে। এরপরই তিন বিগ্রহকে মন্দিরের মূল রত্নবেদিতে তোলা হবে। আর উল্টোরথ শুরু হওয়ার আগে মন্দিরের পুরোহিত জগন্নাথদেবের দ্বাররক্ষীদের পুজো করেন। যা দ্বারপাল পুজো নামে পরিচিত।
এখন প্রশ্ন তিনদিন কেন বাইরে রাখা হয় বিগ্রহদের? পুরাণ ও লোকগাথা অনুসারে এই কয়েকটি দিন জগন্নাথদেবের উপর অভিমান করে থাকেন তাঁর স্ত্রী স্বয়ং মা লক্ষ্মীদেবী। কারণ তিন ভাই বোন মাসির বাড়ি গিয়েছেন, কিন্তু সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়নি লক্ষ্মীদেবীকে। কথিত আছে পুরীর মূল মন্দিরে জগন্নাথদেব ঢুকতে গেলে দেবীলক্ষ্মী দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাই লক্ষ্মীদেবীর মান ভাঙাতে জগন্নাথদেব হাঁড়ি ভর্তি রসগোল্লা নিয়ে এসেছিলেন। সেই থেকেই রসগোল্লা উৎসব-সহ অন্যান্য রীতি পালন হয়ে আসছে উল্টোরথের পর থেকে।
আর সেই সূত্রে পুরীর প্রায় সমস্ত মিষ্টির দোকানেই গত কয়েক দিন ধরেই শুরু হয়ে গিয়েছে রসগোল্লা তৈরির কাজ। কারিগরদের যেন নাওয়া খাওয়ার সময় নেই। এই সময়ে পুরী তথা ওড়িশাবাসী রসগোল্লায় মজে থাকেন। সবমিলিয়ে মহা ধুমধামের সঙ্গে পুরী তথা দেশজুড়ে পালিত হতে চলেছে উল্টোরথ উৎসব।