ডিসেম্বরে মেগা শো মমতার, ১ মাসে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা সাধারণের অ্যাকাউন্টে পাঠাবে নবান্ন
শেষ কবে বাংলায় এরকম হয়েছিল কে জানে! নবান্নের অনেক আমলাই হয়তো স্মরণ করে বলতে পারবেন না। সেই বাম জমানা থেকে ঋণভারে জর্জরিত কোষাগার। সুদ দিতে গিয়ে মূলধন খাতে খরচের টাকা থাকে না। সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দের সংস্থান করতে দিল্লির দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকতে হয়। নামে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো, তবু তদ্বির না করলে সে টাকাও সময়ে আসে না। আর এখন দিল্লি-কলকাতা যে বৈরিতার সম্পর্ক, তাতে অর্থ কমিশনের সুপারিশ মোতাবেক নিয়মমাফিক কিছু ভাগের টাকা পাওয়া ছাড়া অনেক কিছুই বন্ধ।
কিন্তু এরই মধ্যে ডিসেম্বরে নয়া মাইলফলক তৈরি করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । শুধু ডিসেম্বর মাসে গরিব ও প্রান্তিক মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা পাঠাতে চলেছে তাঁর সরকার।
মাইলফলক কেন?
কারণ, অতীতেও আবাস যোজনার আওতায় গরিবের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের কিস্তির টাকা গেছে। সে ছিল কেন্দ্রের পাঠানো টাকা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ভারতবর্ষের কোনও রাজ্য সরকার গরিব ও প্রান্তিক মানুষকে বাড়ি বানানোর জন্য এক লপ্তে এত টাকা দেয়নি। সেদিক থেকে এক প্রকার রেকর্ড করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে ১২ লক্ষ গরিব পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে আবাস যোজনা খাতে এক সঙ্গে ৬০ হাজার টাকা করে পাঠাবে নবান্ন। এটা হল প্রথম কিস্তির টাকা। অর্থাৎ আবাস খাতে ডিসেম্বর মাসে ৭২০০ কোটি টাকা রিলিজ করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার।
এখানে বলে রাখা ভাল, প্রথমে ঠিক ছিল আবাস যোজনা খাতে ১১ লক্ষ ৩২ হাজার পরিবারকে অনুদান দেওয়া হবে। কিন্তু এত বেশি সংখ্যায় আবেদন জমা পড়েছে যে তা বাড়িয়ে ১২ লক্ষ করতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সরকার আবাস যোজনা খাতে কী ধরনের টাইমলাইন ধরে চলছে, । তাতে বলা হয়েছিল, ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে তহবিল বণ্টনের জন্য সমস্ত প্রস্তুতি সেরে ফেলতে হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, অত দেরি করলে হবে না। আরও আগে টাকা ছাড়তে হবে।
সেই মোতাবেক গত শুক্রবার রাতে একটি নির্দেশিকা জারি করেছে পঞ্চায়েত দফতর। তাতে পুরনো টাইমলাইনে সংশোধন করে বলা হয়েছে, ১৫ ডিসেম্বর থেকে টাকা পাঠানো শুরু করে দিতে হবে। নবান্নের এক আমলার কথায়, বাংলার প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের কাছে বড়দিন এগিয়ে এল। আগে স্থির ছিল, ক্রিসমাসের সময়ে তথা বড়দিনে টাকা ছাড়া হবে। এখন তা দশ দিন এগিয়ে আনা হল।
এরই পাশাপাশি ডিসেম্বর মাসে ২ কোটি মহিলাকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার খাতে প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। এখানে বলে রাখা ভাল, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের উপভোক্তাদের তালিকায় সংখ্যাটা কিছুটা বেড়েছে। নতুন ৫ লক্ষ নাম তাতে ঢোকানো হয়েছে।
আবাস যোজনা খাতে ৮২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেও তা আটকে রেখেছে কেন্দ্রের সরকার। কারণ, দিল্লির অভিযোগ, উপভোক্তাদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম হয়েছে। এর পর কিছুটা জেদাজেদি করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন যে, আবাসের টাকা রাজ্যই দেবে। দিল্লির দরকার নেই। সন্দেহ নেই, কষ্টশিষ্ট করে নবান্ন এই যে মাইলফলক তৈরি করতে চলেছে, তা হবে ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের প্রচারের অন্যতম বিষয়। আরও তাৎপর্যপূর্ণ হল, শেষ কিস্তিতে ১২ লক্ষ পরিবার এমন সময়ে ২০ হাজার টাকা করে পাবেন, যার ৬ মাসের মধ্যেই বাংলায় বিধানসভা ভোট হবে।
অনেকেই এই পদক্ষেপকে খয়রাতি আখ্যা দিতে পারেন। তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে তা খয়রাতি মনে হলেও রাজনৈতিক প্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ বহুমূল্য হয়ে উঠতে পারে। কারণ মহারাষ্ট্র ও ঝাড়খণ্ডের ভোটেও দেখা গিয়েছে, মমতার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ধাঁচে এই দুই রাজ্যে যে প্রকল্প শুরু হয়েছে তা ভোটে বাম্পার হিট।
ডিসেম্বর মাস তাই তৃণমূলের জন্যও একটা মহা গুরুত্বপূর্ণ মাস হয়ে উঠতে চলেছে। কারণ, টাকা ঢোকার পর থেকে গ্রামগঞ্জে এর উদযাপনও শুরু করে দেবে তৃণমূল। ক্যামাক স্ট্রিট থেকে এই মর্মে নির্দেশ যাবে খুব শিগগির।
+ There are no comments
Add yours