পথে এল মালদ্বীপ! ড্যামেজ কন্ট্রোলে মরিয়া মুইজ্জু, মোদী-নীতিতে আপ্লুত
প্রথমবার ভারত সফরে এসেছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু। আর সেই প্রথম সফরেই একের পর এক বড় চুক্তি সারলেন। সোমবার মুইজ্জুর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আলোচনায় ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’-এর নীতি এবং SAGAR (Security and Growth for All in the Region) দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দেন। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘ভারত ও মালদ্বীপের সম্পর্ক শতাব্দীপ্রাচীন। মালদ্বীপ আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু।’ তিনি আরও বলেন, ‘মালদ্বীপ আমাদের প্রতিবেশী নীতি এবং SAGAR দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনও সঙ্কটে ভারত সবসময় মালদ্বীপের পাশে থেকেছে।’
মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথমবার ভারত সফরে এসেছেন। এর আগে মালদ্বীপ-লাক্ষাদ্বীপ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে বিতর্ক হয়েছিল, তা কারও অজানা নয়। ওয়াকিবহল মহল বলছে, সম্পর্ক মেরামত করার উদ্দেশ্যেই তিনি দিল্লিতে এসেছেন।
শুধু তাই নয়, মালদ্বীপে ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচার চালিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল এই মুইজ্জু সরকার। সেখানে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই সব কাণ্ড কারখানায় দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। তবে এখন তিনি সেই প্রচার থেকে সরে এসে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করছেন।
এবার অবশ্য পুরনো ঝামেলা ভুলে মালদ্বীপ-ভারত অর্থনৈতিক এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তাকে কেন্দ্র করে একটি নতুন পার্টনারশিপের কথা ভাবছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানান, মালদ্বীপের উন্নয়নকে ভারত সবসময় অগ্রাধিকার দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদী আরও বলেন, মালদ্বীপের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় ভারত আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। এর মধ্যে রয়েছে $400 মিলিয়ন এবং ₹3000 কোটি টাকার কারেন্সি সোয়াপ চুক্তি।
এদিকে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু ভারতের আর্থিক সহায়তার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘ভারত সবসময় মালদ্বীপের পাশে থেকেছে।’এদিন হানিমাধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পেরও উদ্বোধন হয়। এই বিমানবন্দর ভারতের সহযোগিতায় তৈরি হয়েছে। এছাড়া, দুই দেশের মধ্যে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেমন:মালদ্বীপে রুপে কার্ড চালু করা
অ্যাড্ডুতে ভারতীয় কনস্যুলেট এবং বেঙ্গালুরুতে মালদ্বীপের কনস্যুলেট খোলা নিয়ে আলোচনা
ভারতের সহায়তায় নির্মিত ৭০০টি রেসিডেন্সিয়াল ইউনিটের হস্তান্তর
$50 মিলিয়নের ট্রেজারি বিলের রোলওভার।
মালদ্বীপে রুপে কার্ড চালু করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। আর এটি চালু হওয়ার ফলে আর্থিক সংযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে। এখানেই শেষ নয়, হানিমধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি নতুন রানওয়ে উদ্বোধনের বিষয়েও কথা হয়েছে। এক্সিম ব্যাঙ্কের বায়ার্স ক্রেডিট ফেসিলিটির আওতায় সাতশোটিরও বেশি হাউজিং ইউনিট তুলে দেবে ভারত, এমনই আলোচনা হয়েছে সেখানে। এই বৈঠকের আগে মুইজ্জুকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাগত জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধির স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যাওয়ার আগে মুইজ্জুকে ত্রি-সেবা গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য গত বছরের নভেম্বর মাসেই ক্ষমতায় এসেছেন মুইজ্জু। ফলে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এটাই তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় ভারত সফর। যদিও জুনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণের সময় ভারতে এসেছিলেন তিনি। এমনিতে এটা শোনা যায়, চিনের প্রতি একটু বেশিই ঝোঁক রয়েছে মুইজ্জুর।