পার্থেনিয়াম–বিষেই ঘায়েল ক্যান্সার? সাড়া ফেললেন বাঙালি বিজ্ঞানীরা
আসলে বিষই। কিন্তু পার্থেনিয়াম আগাছা থেকে মেলা সেই বিষকেই অমৃতের মোড়কে উপস্থিত করে দুরারোগ্য স্তন–ক্যান্সার নিরাময়ে দিশা দেখালেন চার বাঙালি বিজ্ঞানী। তাঁদের গবেষণা সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা দুনিয়ায়। আশান্বিত চিকিৎসকমহল।
বিষটি হলো পার্থেনোলাইড। যা সংস্পর্শে এলেই মেরে ফেলতে পারে দেহকোষকে। সেই বিষেরই অমৃত–মোড়কের নাম ন্যানো-মেটেরিয়াল ক্যারিয়ার। যা সুস্থ দেহকোষকে এড়িয়ে একমাত্র হামলা চালায় ক্যান্সার আক্রান্ত কোষেই। ফলে অত্যন্ত বেয়াড়া ধরনের স্তন ক্যান্সার বলে পরিচিত ‘টিএনবিসি’–কেও নিকেষ করতে পারে এই ‘টার্গেটেড’ ড্রাগ ডেলিভারি সিস্টেম।
মালদার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ গবেষণার ফসল এই ‘পার্থেনোলাইড ইন ন্যানো-মেটেরিয়াল ক্যারিয়ার ডেলিভারি’র সম্প্রতি পেটেন্ট পেয়েছেন চার বিজ্ঞানী—গৌড়বঙ্গের ফিজ়িয়োলজির প্রফেসর বিপ্লব গিরি, তাঁর রিসার্চ স্কলার সানন্দা দে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মিজানুর রহমান মোল্লা ও তাঁর রিসার্চ স্কলার অরুণ মণ্ডল।
তাঁদের লেখা গবেষণাপত্রটি এইনভেম্বরে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির দু’টি জার্নালে (অ্যাপ্লায়েড ন্যানো-মেটেরিয়ালস এবং অ্যাপ্লায়েড বায়ো-মেটেরিয়ালস) প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানপত্রিকা ‘নেচার’ সেই সাফল্যগাথা তুলে ধরেছে তাদের বিশেষ প্রতিবেদনে। স্বাভাবিক ভাবেই তা আলোড়ন ফেলেছে ক্যান্সার চিকিৎসার দুনিয়ায়।
কেন এই আবিষ্কার নতুন দিশা দেখাচ্ছে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায়
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, স্তনে মোটামুটি চার ধরনের ক্যান্সার হয়। একটির জন্যে দায়ী ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টর কোষ (ইআর টাইপ), একটির জন্যে দায়ী প্রোজেস্টেরন রিসেপ্টর কোষ (পিআর টাইপ) এবং আর একটির জন্যে দায়ী হিউম্যান এপিডার্মাল গ্রোথ রিসেপ্টর-২ কোষ (এইচইআর-২ টাইপ)। এই তিন ধরনের ক্যান্সারেরই প্রথাগত চিকিৎসা রয়েছে।
মুশকিল হলো চতুর্থ এক ধরনের স্তন ক্যান্সার নিয়ে, যাকে বলে ট্রিপল নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যান্সার (টিএনবিসি)। অর্থাৎ প্রথম তিনটির মধ্যে একটিও নয়, সম্পূর্ণ নতুন একটি ধরন। তাতে কাজ করে না প্রথাগত সার্জারির পর কেমোথেরাপি কিংবা ইমিউনোথেরাপির মতো প্রচলিত চিকিৎসা। এ বার সেই টিএনবিসি ক্যান্সার সারানোর ক্ষেত্রেই উদ্ভাবনী পথের হদিশ দিল বাংলার বিজ্ঞানীদের গবেষণা।
মুখ্য গবেষক বিপ্লব বলেন, ‘অন্য স্তন ক্যান্সারেরতুলনায় টিএনবিসি-র চিকিৎসা বেশ চ্যালেঞ্জের। আমাদের গবেষণায় পার্থেনোলাইড-যুক্ত ন্যানো-ক্যরিয়ারটি সুনির্দিষ্ট ভাবে ক্যান্সার কোষকে খুঁজে খুঁজে ধংস করতে পারে। শরীরের অন্য সুস্থ কোষের কোনও ক্ষতি করে না।
আর যেহেতু তা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী স্টেম সেলকেও ধ্বংস করে দেয়, তাই ক্যান্সার ফিরে আসার আশঙ্কাও নেই বললেই চলে।’ তিনি জানান, আপাতত ল্যাবে সেল কালচার করে তাঁরা গবেষণালব্ধ ফলাফল সম্পর্কে িনশ্চিত হয়েছেন। আগামী দিনে ইঁদুরের উপরে অ্যানিমাল মডেলে ও পরে মানুষের উপরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল জরুরি। সেখানে একই রকম সাফল্য মিললে তবেই তা মানুষের কাজে লাগবে। তবে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ।
+ There are no comments
Add yours