যোগীরাজ্যে মসজিদের সমীক্ষা ঘিরে অশান্তি, সংঘর্ষে নিহত ৩, জখম ৩০ পুলিশ
মন্দির–মসজিদ বিতর্ক ঘিরে ফের অশান্তি। ঘটনাস্থল আবারও যোগীরাজ্য! উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। তারই মধ্যে রবিবার সম্ভলের শাহি জামা মসজিদ এলাকায় পুলিশ-জনতার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণ গেল অন্তত তিন জনের। বিক্ষুব্ধ জনতার মারে গুরুতর আহত অন্তত ৩০ জন পুলিশকর্মী। মসজিদের সমীক্ষা চলাকালীন অশান্তি বাধানোর দায়ে আটক অন্তত ১৫ জন।
সকাল থেকে শুরু হওয়া অশান্তি দুপুরের পর মোটামুটি থিতু হলেও, পরিস্থিতি থমথমেই। সমীক্ষার কাজও মিটেছে এ দিনের মতো। তবে প্রশাসনের আশঙ্কা, ফের যে কোনও মুহূর্তে ছড়াতে পারে অশান্তির আঁচ। গোটা এলাকা জুড়ে তাই ১৪৪ ধারা জারি করে সতর্ক টহলদারি শুরু করেছে পুলিশ।
উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব যদিও এই অশান্তির পিছনে বিজেপি–রই হাত দেখছেন। তাঁর দাবি, ‘ভোটে যথেচ্ছ রিগিংয়ের অভিযোগ থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই এ দিন অশান্তি ছড়িয়েছে যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকার।’
একাংশের মধ্যে অসন্তোষ থাকলেও সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে অযোধ্যার বাবরি মসজিদ–রাম মন্দির সংঘাত আপাতত মিটেছে। হালে আবার নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ নিয়ে। ওই মসজিদ কি আসলে বিশ্বনাথের মন্দির? একই রকম বিতর্ক জুড়েছে লখনৌয়ের শাহি ইদগাকে কেন্দ্র করেও। রবিবার সম্ভলের শাহি জামা মসজিদেও ওই সংক্রান্ত বিতর্ক সমাধানেই আদালতের নির্দেশে সরকারি সমীক্ষক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছয় এবং তারপরই স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের ধুন্ধুমার বেধে যায়।গল্পটা সেই এক— মন্দির ভেঙে মসজিদ তৈরির অভিযোগ ঘিরে মামলা। সম্ভলের শাহি জামা মসজিদ কি আদতে হরিনাথ মন্দির? ইতিহাসে এই মসজিদের স্থপতি হিসেবে বাবরের নাম থাকলেও, সম্প্রতি স্থানীয় কেলা দেবী মন্দির কমিটির তরফে আদালতে মামলা রুজু করে দাবি করা হয়, ওখানে আসলে শ্রী হরিনাথের মন্দির ছিল। কুর্সির জোরে ১৫২৯ সালে যা নাকি মসজিদে রূপান্তরিত করেন বাবর! কিন্তু আইন–ই–আকবরি এবং বাবরনামা–য় তো শুধু বাবরের হাতে মসজিদ স্থাপনের কথাই আছে— পাল্টা যুক্তি আসে। এই বিবাদের মীমাংসা করতেই সমীক্ষার নির্দেশ দেয় আদালত। গত ১৯ নভেম্বর পুলিশ মোতায়েন করে প্রথম দফায় সমীক্ষাও করে যান সরকারি আধিকারিকরা। তখনই অবশ্য ‘বিপদের গন্ধ’ পেয়েছিল প্রশাসন।সেই মতো এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছিল সমীক্ষক দল। দলে ছিলেন জেলাশাসক, এসপি, বিডিও, সার্কেল অফিসারেরা। সমীক্ষা চলাকালীন অশান্তি রুখতে সঙ্গে ছিল পুলিশের বিরাট বাহিনী এবং র্যাপিড ফোর্স। কিন্তু দলটি এলাকায় পৌঁছতেই পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে বলে দাবি পুলিশের একটি সূত্রের। কথাবার্তা ছাড়াই প্রায় তিনশো মারমুখী জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে শুরু করে। এমনকী, সেই সময় হামলাকারীদের কেউ কেউ গুলিও চালায় বলে অভিযোগ।পাল্টা অভিযানে নামে পুলিশ। শুরু হয় বেধড়ক লাঠিচার্জ। কাঁদানে গ্যাসের শেলও ফাটায় পুলিশ। একইসঙ্গে বিক্ষুব্ধ জনতাকে উদ্দেশ করে চলতে থাকে পুলিশের মাইকিং— ‘দয়া করে আপনারা রাজনীতির ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না।’ সূত্রের খবর, মসজিদের প্রধানও উন্মত্ত জনতাকে একাধিক বার এলাকা ছাড়তে বলেন। তবু অশান্তি এড়ানো যায়নি। পুলিশের দাবি, কোনও কথায় কান না–দিয়ে ক্ষুব্ধ জনতার একাংশ একের পর এক গাড়িতে আগুন লাগাতে শুরু করে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি আধিকারিকদের অনেকে জানিয়েছেন, তাঁরা মসজিদে ঢুকতে যাওয়া মাত্রই এ দিক–সে দিক থেকে ইট ও পাথরবৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। প্রাথমিক ভাবে তবু পুলিশ মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। একটা সময়ে হাতের বাইরে বেরিয়ে যায় পরিস্থিতি। আশপাশের জেলা থেকে বাধ্য হয়েই আনাতে হয় আরও পুলিশ
+ There are no comments
Add yours