১৮৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন বাংলার ব্যঙ্গচিত্রের আদিপুরুষ ও পথপ্রদর্শক গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বাংলার যে রেনেসাঁস জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অবদানে পুষ্ট ছিল, তাকে গগনেন্দ্রনাথ তুলির টানে এগিয়ে নিয়ে যান এক আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। গগনেন্দ্রনাথের তিনটি ব্যঙ্গচিত্র সম্বলিত অ্যালবাম একদা প্রকাশিত হয়েছিল অদ্ভুত লোক, বিরূপ বজ্র ও নবহুল্লোড়। তবে একেবারে নিখাদ ব্যঙ্গচিত্র না হলেও ক্যারিকেচার জাতীয় ছবি আঁকার ব্যাপারে অনেকেই উৎসাহী ছিলেন। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ এই মাধ্যমটিকে ভরিয়ে তুলেছিলেন তাঁর তুলির ভাষায়। রবীন্দ্রনাথের আঁকা বেশ কিছু ছবি ক্যারিকেচারধর্মী। বিশেষ করে ‘মুসোলিনি’ ছবিটি।
গগনেন্দ্রনাথের পর যাঁর আঁকা এবং লেখা বাংলা ব্যঙ্গসাহিত্য ও ব্যঙ্গচিত্রকে ঋদ্ধ করেছে তিনি হলেন সুকুমার রায়। সুকুমার রায়ের আঁকা ছবি বাঙালি মননের অনেকটাই অধিকার করে আছে। এরপর আসে যথাক্রমে চঞ্চলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বনবিহারী মুখোপাধ্যায়, বিনয়কুমার বসু, যতীন্দ্রকুমার সেন, চারু রায়, দীনেশরঞ্জন দাস, সতীশচন্দ্র সিংহ, জ্যোতিষচন্দ্র সিংহ প্রমুখের নাম। চঞ্চলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম ব্যঙ্গসাহিত্য ও ব্যঙ্গচিত্রের যুগলবন্দি সৃষ্টি করেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গানের কলির সঙ্গে তাঁর আঁকা রঙিন ব্যঙ্গচিত্র সে-যুগে বাঙালি মোসাহেব ও কেরানিদের দুঃসহ জীবনধারাকে পরিস্ফুট করেছিল।
গগনেন্দ্রনাথ যদি বাংলা ব্যঙ্গচিত্রের জনক হন, তাহলে পিসিএল নিঃসন্দেহেই আধুনিক ব্যঙ্গচিত্রের প্রবর্তক। প্রফুল্লচন্দ্র লাহিড়ি, পিসিএল এবং কাফী খাঁ এই দুই নামে ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছেন। ইতিহাসের অধ্যাপক, বেহালাবাদক এই শিল্পীর হাতে রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্রের এক নতুন রূপ উন্মোচিত হয়। তাঁর আমেরিকা সফরকালে সেখানেও তাঁর ব্যঙ্গচিত্র নিয়মিত ছাপা হত। ১৯৩৪ সালে তিনি যোগ দেন অমৃতবাজার পত্রিকায় স্টাফ কার্টুনিস্ট হিসাবে। এদেশের সংবাদপত্রের ইতিহাসে তিনিই প্রথম ব্যঙ্গচিত্রী যিনি আমৃত্যু এই শিল্পমাধ্যমটিকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির বিশ্লেষণে তাঁর তুলনীয় ব্যঙ্গচিত্রী ছিল তখন নগণ্য। বাচ্চাদের জন্য তিনিই প্রথম কমিক স্ট্রিপ আঁকতে শুরু করেন। অমৃতবাজারে আঁকতেন ‘খুড়ো’ আর যুগান্তরে ‘শিয়াল পন্ডিত ‘।সাহিত্যে গগণেন্দ্রনাথের ভূমিকা অনসীকার্য