বীরভূমের পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম হলো নলহাটি নলাটেশ্বরী মন্দির। এই মন্দির ৫১ সতীপীঠের অন্যতম সতীপীঠ। পুরাণ মতে এখানে সতীর কণ্ঠনালী পড়েছিল। সেই অনুসারেই এই মন্দিরের নাম হয়েছে নলাটেশ্বরী।
নলাটেশ্বরী মন্দিরে প্রতিদিন ভোর পাঁচটার সময়ে মায়ের স্নান এবং মঙ্গলারতি করা হয়। আগত পুণ্যার্থীরা চাইলে নিজে হাতে মাকে স্নান করিয়ে মঙ্গলারতি করতে পারেন। দর্শন করতে পারেন মায়ের কণ্ঠনালীও। এছাড়াও এখানে বর্তমানে আগত পুণ্যার্থীদের জন্য ভোগের বন্দোবস্ত করা হয়েছে পুজো কমিটির তরফ থেকে। মাত্র ৫১ টাকার বিনিময়ে সেই ভোগ পেতে পারেন পুণ্যার্থীরা। এই মন্দিরে তৈরি করা হয়েছে একটি প্রবেশদ্বার এবং নাট মন্দির তৈরির কাজ চলছে। বছরের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে ভক্তদের আগমন হয়ে থাকে। গোটা বঙ্গদেশজুড়ে রয়েছে অসংখ্য শাক্তমন্দির, সেগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটা আবার শক্তিপীঠ বলে পরিচিত। শাক্তমন্দির বলতে দুর্গা-কালী বা অন্য কোনও শাক্তদেবীর মন্দির বোঝায় কিন্তু শক্তিপীঠগুলোর আলাদা গুরুত্ব আছে। বিভিন্ন পুরাণের বর্ণনা অনুসারে বলা হয়ে থাকে, পিতা দক্ষের সভায় অপমানিত হয়ে শিবজায়া সতী দেহত্যাগ করলে শিব সেই মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে প্রলয়নৃত্য আরম্ভ করে দেন। সেই প্রলয় থেকে জগত সংসার কে রক্ষা করার জন্য কৃষ্ণ সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর মৃতদেহ ৫১ টি টুকরো খন্ড করে শিবকে ভারমুক্ত করলে শিব প্রলয় নৃত্য বন্ধ করেন এবং সৃষ্টিরক্ষা পায়। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের আঘাতে ছিন্ন হওয়া সতীর দেহাংশ ভারতের যে সমস্ত জায়গায় পড়েছিল পিঠস্থান নামে পরিচিত। সেই সব পিঠস্থানে রয়েছে এক একটি মন্দির বীরভূম জেলার নলহাটিতে তেমনি রয়েছে নলাটেশ্বরী।
পুরাণ অনুসারে বলা হয়ে থাকে একদা ওই জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় সতির নলা অর্থাৎ সরু কোন দেহাংশ পড়েছিল। ভারতের । ঐ পিঠে যে দেবী কালিকার অবস্থান তাকে নলাটেশ্বরী বলা হয়ে থাকে। এই মন্দিরের প্রবেশ পথের মাথায় রয়েছে গণেশ মূর্তি এবং দু’ধারে লক্ষ্মী সরস্বতীর মূর্তি।
কালীমন্দির হিসেবে পরিচিত হলেও নলাটেশ্বরীতে কোনও প্রতিষ্ঠিত কালী-বিগ্রহ নেই। মন্দিরগাত্রেই পাথরে কালীর মুখমণ্ডল বসানো আছে। তেমন কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ না থাকলেও কিংবদন্তি অনুসারে বলা হয়, ৮৪৪ সাধারণাব্দ নাগাদ এই জায়গাটা পিঠ হিসেবে আবিষ্কৃত হয়। তখন একটা ছোট মন্দির ছিল। অষ্টাদশ শতকে নাটেরের জমিদার রানি ভবানী টিলার গায়ে এই মন্দির নির্মাণ করিয়ে দেন। বীরভূমের আরও কয়েকটা পীঠের মতোই নলাটেশ্বরী মন্দির দর্শন করতে সারা বছরই বহু ভক্তের সমাগম হয়। নিত্যপুজো ছাড়াও সমারোহ হয় দুর্গা, কালী ও সরস্বতীপুজোর সময়ে। এ ছাড়া অন্যান্য পালা-পার্বণেও তীর্থযাত্রীরা আসেন এই মন্দিরে।