শুশুনিয়া পাহাড়ের রুক্ষ্ম এলাকা সবুজে ঢাকতে গত বছরই পরীক্ষামূলকভাবে বীজ বোমার ব্যবহার করেছিল বন দফতর। পরীক্ষামূলক সেই উদ্যোগ সফল হওয়ায় এবার আরও বেশি সংখ্যক বীজ বোমা তৈরি করে তা পাহাড়ের বিভিন্ন অংশে নিক্ষেপ করা শুরু করল বন দফতর। বন দফতর জানিয়েছে সব মিলিয়ে চলতি বছর এক হাজার বীজ বোমা ছোঁড়া হবে শুশুনিয়া পাহাড়ে।
বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড় জীব বৈচিত্রে ভরপুর। তাছাড়া প্রতি বছর সবুজে ঢাকা এই পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলি থেকেও বিপুল সংখ্যক পর্যটক এই শুশুনিয়া পাহাড়ে আসেন। পাহাড়ের বেশিরভাগ অংশ সবুজে ঢাকা থাকলেও বেশ কিছু জায়গা ন্যাড়া অবস্থায় রয়েছে। যা শুধু পাহাড়ের সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে বাধা তাই নয়, পাহাড়ে ভূমিক্ষয় ও ধসের সম্ভাবনাও বৃদ্ধি করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েকবছর আগে পর্যন্ত স্থানীয় পাথর খোদাই শিল্পীরা পাহাড় থেকে লাগাতার পাথর সংগ্রহ করতেন। এরফলে পাহাড়ের গায়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়। ধ্বংস হয় ওই এলাকার বনভূমি। এছাড়াও প্রায় প্রতি বছর কার্যত নিয়ম করে আগুন লাগছে শুশুনিয়া পাহাড়ের জঙ্গলে। ফলে ক্রমশ ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে বনভূমি। এই অবস্থায় পাহাড়ের ন্যাড়া অংশ ফের সবুজে ঢাকতে গত বছর থেকেই নয়া পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছে বন দফতর।
স্থানীয় মানুষ ও একাধিক পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের সহযোগিতায় বন দফতর গোবর, জৈব সার ও মাটি নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে বড় বড় হাত বোমার আকারে মন্ড তৈরি করেছে। সেই গোলাকার মন্ডের ভেতর রেখে দেওয়া হয়েছে এক বা একাধিক গাছের বীজ। পাহাড়ে বর্ষা শুরু হতেই সেই বীজ বোমা ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে রুক্ষ্ম ও ন্যাড়া এলাকাগুলিতে। এই বোমা বৃষ্টির জলে ভেঙে গিয়ে প্রথমে রুক্ষ্ম এলাকার উপর তৈরি করছে গোবর ও জৈব সার সমৃদ্ধ মাটির একটি স্তর। সেই স্তরে সহজেই বোমার ভিতরে থাকা বীজ অঙ্কুরিত হয়ে জন্ম দিচ্ছে চারাগাছ। বন দফতর জানিয়েছে বাস্তুতন্ত্রের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বড় ভূমিকা নেয় বট ও অশ্বত্থ গাছ।
তাছাড়া এই দুই গাছেরই ধর্মীয় গুরুত্ব থাকায় কেউ সাধারণত এই গাছগুলি নষ্ট করে না। এই দুটি বিষয়কে মাথায় রেখে বীজ বোমা তৈরির ক্ষেত্রে ওই দুটি গাছের বীজকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বন দফতরের আশা এভাবে লাগাতার প্রচেষ্টা চালানো হলে অচিরেই আবার শুশুনিয়া পাহাড় ঢাকা পড়বে বনভূমিতে। ভালোবাসার পাহাড়কে সবুজে মোড়ার এই প্রক্রিয়ায় হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে একাধিক পরিবেশপ্রেমী সংগঠন।