এক লাখি ন্যানো, প্রতিশ্রুতি রেখেছিলেন রতন টাটা, ন্যানো কারখানার জন্য কেন সিঙ্গুর কে বেছেছিলেন
রতন টাটা পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরি করতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি চেয়েছিলেন সেখানে শিল্প আসুক এবং কর্মসংস্থান হোক। তবে, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা তৈরির বিরুদ্ধে আন্দোলন হওয়ার পর, রতন টাটা সেই প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ থেকে সরিয়ে নেন। গুজরাটের সানন্দে নতুন কারখানা তৈরি করে টাটা ন্যানো উৎপাদন শুরু করা হয়।
এই সাক্ষাৎকারেই নীরা জানিয়েছেন, কেন হঠাৎ ১ লক্ষ টাকায় গাড়ি তৈরির কথা ভেবেছিলেন রতন টাটা৷ ন্যানো গাড়ি তৈরির প্রকল্পের জন্য কেন রতন টাটা সিঙ্গুরকে বেছে নিয়েছিলেন, তাও জানিয়েছেন নীরা৷নীরা জানিয়েছেন,উনি একজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ ছিলেন৷ উনি চাইতেন, মোটরসাইকেলে বসে কেউ যাতে বৃষ্টিতে না ভেজেন৷ সাধারণ মানুষের জন্যই কিছু করতে চেয়েছিলেন৷শেষ পর্যন্ত অবশ্য সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা হয়নি৷ আক্ষেপের সুরে নীরা বলেন. ন্যানো কারখানা হয়ে গেলে কলকাতা থেকে সিঙ্গুর পর্যন্ত রাস্তার দুপাশের চেহারা বদলে যেত৷ যেমন সানন্দের চেহারা এখন গুরুগ্রামের মতো হয়ে গিয়েছে
১লাখি ন্যানো কেন? রতন টাটা কেন ন্যানো গাড়ি তৈরির সিদ্ধান্ত?
সদ্য প্রয়াত হয়েছেন টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও শিল্পপতি রতন টাটা ৷ পদ্মভূষণ ও পদ্মবিভূষণে ভূষিত রতন টাটার মৃত্যুতে গোটা দেশে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রতন টাটা সেই একই ব্যক্তি যিনি দেশের মধ্যবিত্ত পরিবারকে গাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। দিয়েছিলেন প্রতিশ্রুতি ৷ টাটা ন্যানো ছিল তাঁর স্বপ্নের মূর্ত প্রতীক। দেশে এটি ‘লাখতকিয়া গাড়ি’ নামেও পরিচিত ছিল ন্যানো গাড়ি ৷
প্রয়াত রতন টাটা কখন এই ঘোষণা করেছিলেন ?
ন্যানোর কথা উঠলে প্রথমেই আসে সিঙ্গুর কারখানার কথা ৷ যেখানে তিনি 1 লাখ টাকা দামে টাটা ন্যানো তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলেন ৷ যা দেশের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি ৷ টাটা ন্যানো মডেল প্রথমবারের মতো 2008 সালে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত অটো এক্সপোতে বিশ্বের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
এর পরে, 2009 সালে কোম্পানি টাটা ন্যানো চালু হয় গুজরাতের সানন্দ থেকে । এই গাড়িটি ভারতীয় বাজারে ‘লাখতকিয়া’ গাড়ির নাম দিয়ে বেশ শিরোনাম করেছিল। মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে আনতে এর দাম রাখা হয়েছিল মাত্র 1 লাখ টাকা। 2008 অটো এক্সপোতে টাটা ন্যানো চালু করার সময়, রতন টাটা বলেছিলেন যে “আমরা দেশকে একটি সাশ্রয়ী মূল্যের গাড়ি দিয়েছি এবং দেশের একটি বড় অংশ এতে উপকৃত হবে ।”
2009 সালের মার্চ মাসে টাটা ন্যানো বাজারে আসে ৷ এই গাড়িটি বাজারে সাড়া ফেলতে পারেনি । ন্যানো লঞ্চের সঙ্গে সঙ্গে এর দাম প্রকাশ করা হয়েছিল এবং টাটা ন্যানো-র প্রারম্ভিক মূল্য রাখা হয়েছিল 1 লক্ষ টাকা। গাড়িটির প্রাথমিক বুকিং সবাইকে অবাক করে এবং 2,00,000 ইউনিট বুক করা হয়েছিল। টাটা মোটরস তার বুকিং থেকে 2,500 কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল ৷
টাটা ন্যানো-এর নাম গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নথিভুক্ত
টাটা ন্যানো সারা দেশে দীর্ঘতম ভ্রমণ করার জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম নথিভুক্ত করেছিল। ন্যানো এই কীর্তিটি 10 দিনের মধ্যে সম্পন্ন করেছিল। যাত্রাটি তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে শুরু হয়েছিল এবং টাটা ন্যানো 10,218 কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছিল এবং বেঙ্গালুরুতে যাত্রা শেষ করেছিল।
2007: জানুয়ারিতে, সিঙ্গুরে টাটা মোটরস কারখানার নির্মাণ শুরু হয়। জুন মাসে, তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষকদের কাছ থেকে জমি নিয়ে গাড়ি প্রস্তুতকারকদের হাতে তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে (কথিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে) আন্দোলন শুরু করেছিলেন। হুগলির সিঙ্গুরে বিক্ষোভ ও উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায়, টাটা মোটরস সিঙ্গুর প্রকল্প পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। 3 অক্টোবর, 2008-এ, রতন টাটা ঘোষণা করেছিলেন যে টাটা ন্যানো উৎপাদন গুজরাটের সানন্দে স্থানান্তরিত হবে ৷ যেখানে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই প্রকল্পটিকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়েছিলেন ৷
2008: প্রথম টাটা ন্যানো আত্মপ্রকাশ করে।
2009: Tata Motors ভারতের সবচেয়ে ছোট গাড়ি হিসেবে ন্যানো লঞ্চ করে।