২৪শে জুলাই দিনটা বাঙালির আবেগের দোরগোড়ায় কড়া নেড়ে চলে যায়, ঘুম থেকে উঠে সারাদিনের ব্যাস্ততার ফাঁকে হঠাৎ টিভির পর্দায় একটা খবর অনেক কিছুই মনে করিয়ে দেয় তাই তো প্রায় তিরিশ বছরেও বেশি আগে চলে যাওয়া মানুষটির কথা কেমন মনে পরে বার বার, ইউটিউব এ পুরোনো ভিডিও গুলো আবারও নেড়েছেড়ে দেখা, শারীরিক ভাবে তিনি অনুপস্থিত ষ্টুডিও তে কিন্ত আজও তিনি চিরমলিন
আজকের দিনটা মহানায়কের প্রয়াণ দিবস!
পৃথিবীর ইতিহাসে এতগুলো বছর পরেও কোনোদিন এভাবে কোনো মহানায়কের মৃত্যুদিনে মুছরে কেউ পড়েনি, বাঙালি পরে আসলে তিনি তো শুধু নায়ক ছিলেন তা নয় ছিলেন মহানায়ক।
ওগো বধূ সুন্দরীর সেটে সেই দিনটা আজন্ম বাংলা সিনেমা প্রেমীদের মনে কালো ছায়া দিয়েগেলো। তিনি ছিলেন উত্তম তবে সিনেমা জগতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে অসম্ভব লড়াইটা খুব কম ইন্টারভিউ এ পাওয়া যায়! অপমান ! কতজনের বাঁকা বিকৃত উক্তি ! চেহারার জন্যে কেউ কেউ তাচ্ছিল্ল শুনতে হয়েছে বারংবার সয়েছেন তাই রয়েছেন, এসব কথা গুলো তিনি কোনোদিন ইন্টারভিউ এ না জানালেও তাঁকে নিয়ে লেখা অনেক বইয়ের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে। বাঙালীর প্রিয় উত্তম বলে কথা তাঁকে নিয়ে কৌতূহল থাকবে সেটাইতো স্বাভাবিক।
আবার কখনো সেই সময়কার কোনো উজ্জ্বল নামি শিল্পীর বিপরীতে অভিনয় করতে গিয়েও পেয়েছেন অপমান।শেষমেষ একটি ছবিতে সুযোগ পেলেও শোনা যায় ছবিটি শেষ পর্যন্ত পায়নি অবশেষে ১৯৪৮ এ দৃষ্টিদান মহানায়ককে সাতাশ টাকা। তবে পুরো সাতাশ টাকা তিনি পাননি, পরপর ৮টা ৯টা ছবি সুপার ফ্লপ ! ষ্টুডিও পাড়ায় ঢুকলে কেউ বলতো নিউ দুর্গাদাস , আবার কেউ বলতেন ছবি বিশ্বাস। ব্যার্থতার ভরপুর সময়টা নিয়ে মুক্তি পেলো বসু পরিবার দর্শক টানলো লোকের মুখে তখন বসু পরিবার নিয়ে খুব আলোচনা ভাগ্য সাথ দেওয়া বোধহয় একেই বলে ‘সাড়ে চুয়াত্তর ‘ নিয়ে নিলো সেই বছরের বেস্ট ছবিটা সুচিত্রা উত্তম একসাথে নাম নিয়ে তৈরী হোল সিনেমার নতুন যুগল।এরপর বৌ ঠাকুরানীর হাট, চাঁপাডাঙার বৌ , মরণের পরে , অগ্নিপরীক্ষা , শাপমোচন , সবার উপরে , সাহেব বিবি গোলাম , ঝিন্দের বন্দি , দুই ভাই , সপ্তপদী , বিপাশা , ভ্রান্তিবিলাস , দেয়া নেয়া, ইন্দ্রানী , নায়ক , থানা থেকে আসছি , এন্টোনি ফিরিঙ্গি ,চিড়িয়াখানা ,রাজকুমারী , ধন্যি মেয়ে , ছদ্মবেশী ,বনপলাশীর পদাবলী , ধনরাজ তামাং , অমানুষ তখন ঝুলি ভোরে শুধুই হিটের তালিকা।’ওগো বধূর’ সেই শুটিং সেটের ঘটনা হঠাৎ সিনেমাপ্রেমীদের একবারে দমিয়ে দিলো, খবরটা আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। তবে কি বিদায় নিলেন উত্তম কুমার?
স্বয়ং সত্যজিৎ রায় মহানায়ক প্রসঙ্গে একবার বলেছিলেন —
“উত্তমকুমার কোনও পরিচালকের ব্যক্তিগত সার্টিফিকেটের অপেক্ষা রাখেন না,ওঁর মতো ষ্টার আর দুটো হবে না,বাংলা চলচিত্র শিল্পের দিকপাল সে ওঁর সঙ্গে আমি কাজ করেছি আশ্চর্য অভিনয় দক্ষতা, উত্তমের মত কোনো নায়ক নেই , কেউ হবে না ! উত্তমের দর্শকদের টেনে রাখার ক্ষমতা রাখে।অনেক নায়ক আছেন , তাদের মধ্যে অনেকেই ভালো অভিনয় করেন, কিন্তু উত্তমের মতো কেউ নেই , কেউ হবে না।” সত্যিতো মানিকবাবুর কথা যেন আজন্ম সিনেমা অনুরাগীর মনের বহিঃপ্রকাশ। আপনি ভালো ঠাকুন উত্তমকুমার আমাদের মহানায়ক হয়েই বেঁচে থাকুন।
এশিয়া নিউজ এর পক্ষ থেকে উত্তমকুমারের প্রয়ান দিবসে এক বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।