সুমনা আদক: ব্রিটেনের মানচিত্রের একেবারে উত্তরে স্কটল্যান্ড, বারোমাসের নয়টা শীত আর বাকিটা বসন্ত নিয়ে সারাবছর ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু এই ক্যাথেলিকদের প্রাচীন শহরটা। স্কটিশদের দেশে দেখবার মতো বিশেষ বিশেষ কিছু জায়গার নামের পাশে কয়েক বছর ধরে শুরু হয়েছে নতুন সংযোজন স্কটিস ল্যাভেন্ডার তারহিল ফার্ম।
প্রিন্সপ স্ট্রিট এর যানজট পেরিয়ে বাইপাস হয়ে শহর থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে হাতবাড়ালেই ছোট্ট কিনরস, চারিদিকে শুধু ধু ধু করছে মাঠ মাঝে মধ্যে দু একটি ঘোড়ার দল আর ভেড়া চড়ে বেড়ানো ছাড়া লোকজনের দেখা খুবই কম। খাবার জিনিস সামগ্রী সাথে নিয়ে একদিনের ট্যুর কিংবা উইকেন্ড ছুটির একটি বিশেষ জায়গা। বিঘার পর বিঘা ফাঁকা মাঠ সেখান দিয়েই নজর পড়লো, তারহিল ফার্মের। সামনের পার্কিংযোন পেরিয়ে তারহিলের চৌকাঠে পা দেওয়া। অনলাইন কিংবা অফলাইন করতে হয় টিকিট সংগ্রহ। বিঘার পর বিঘা ফাঁকা মাঠে তারহিল যেন রূপকথার জাল বোনা। সত্যি চোখে না দেখলে বেগুনি পৃথিবী বলে এমন কিছু আছে তা হয়তো বোঝার উপায় ছিল না।
বিঘা খানেক মাঠের মাঝখানে মাঝখানে বেগুনি রঙের সারি সারি শুধু ফুলের পাহাড়, দুর থেকে একঝোলোকে মনে হবে বেগুনি গালিচা পাতা, তিন চার একড় জায়গা নিয়ে সাজানো বাগান,দেখতে সেদিন বড়োই সুন্দর লাগছিলো। তারহিল ফার্মের একদিকে সার দেওয়া সবুজ গাছের ফাঁকদিয়ে ল্যাভেন্ডারের এক ঝলকের প্রেমে টালমাটাল হবে যেকেউ, ল্যাভেন্ডারের মনমাতানো গন্ধ হোলো উপরি পাওনা একেবারে খাঁটি বিশুদ্ধ ফুলের গন্ধ নিমেষে পিছনে ফেলতে পারে বিশ্বের নামি দামি যাবতীয় পারফিউমকে। ছোট বড়ো সব মিলিয়ে সাত রকমের ফুলের আসর রয়েছে তারহিলের বাগানে। কালেন্দুলা, কামেলিয়া, সেজ, কর্নফ্লাওয়ার, মিন্ট একসাথে সাত রকমের ল্যাভেন্ডার দিয়ে নিয়ে সাজানো সেই বাগান। কাছে আসতেই দুরের দেখার ইচ্ছে আরো ক্ষীণ হতে থাকলো বেগুনি মাঠের উপরে ভেসে বেড়ানো হওয়ায় ল্যাভেন্ডারের শিখা যেন ছুঁতে চায় আকাশকে। হরেক রকম মৌ মাছির মধু সংগ্রহ সেদিনের অনুভূতিতে আরেক মাত্রা দিলো। ভিন্ন কোম্পানির ক্যাম্প রয়েছে এই অঞ্চলে এই মধুই পারি দেয় ইউরোপের একাধিক দেশে।ওয়াইল্ড হানি নামে তার বিরাট পরিচিতি। স্কটিশদের কাছে মধু বিদেশে রপ্তানির সাথে তাদের নিত্যদিনের ব্রেকফাস্ট টেবিলের প্রিয় সঙ্গী। গোটা ইউরোপের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ওয়াইল্ড হানির। এমনকি ওয়াইন প্রস্তুত করতেও অনেক সময় ব্যবহার করা হয় এই মধুর। এ তো গেল মধুর গল্প। তারহিলের পাশেই ল্যাভেন্ডার বাগানের পাশের ঘরেই রয়েছে অত্যাধুনিক এক অয়েল মিল, ল্যাভেন্ডার এর বীজ সংগ্রহ করছে একদল কর্মচারী, সেই বীজ দিয়েই সাথে সাথে তৈরী হচ্ছে একাধিক পারফিউম আর বিউটি অয়েল এমনকি রান্নার তেলও। শোনা যায় প্রায় পঞ্চাশ বছর আগেও স্কটিশদের খাবারের তালিকায় থাকতো এই বিশুদ্ধ ল্যাভেন্ডার অয়েল, এখনকার সময়ে হয়তো বলা হবে কলোস্ট্রল ফি ওয়েল।পরিবেশ আর শীতল আবহাওয়ার জন্য স্কটল্যান্ডের চাষাবাদ একেবারেই ছিল না, আজকাল পরিস্থিতি অনেক পাল্টেছে। শুধু স্কটল্যান্ডেই নয় শোনা যায় রোমানিয়ান রাও এই অয়েল রান্না আর স্নানের সময় ব্যবহার করতেন।ওদের বিশ্বাস এই ওয়েল স্কিনের পরিচর্চার জন্য খুব ভালো। স্কটিশদের দেশে তার বিরাট প্রাধান্য।
সারাবছরের মধ্যে চার পাঁচ বসন্ত সময়ে ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে ইউরোপের আকর্ষণ থাকে তুঙ্গে। আর ঠিক এই সময়েই সবুজ হলুদের মাঝে বেগুনি ল্যাভেন্ডার ছবি এঁকে দেয় তারহিলের বাগানে। উইকেন্ড এ অনেক য়াটিস্ট পট্রেট নিয়ে হাজির হয় সেই বাগানে, ফটোগ্রাফার এর ক্লিক চারিদিকে। আকা পথে রঙবেরঙের প্রজাপতি মৌমাছি ছুটে বেরানো আর হোয়াইট নাইটে ঘুরে বেড়ানোর দিনগুলো বারবার মনে পড়ায় তারহিলকে।দু একটা কফি শপ রয়েছে তবে গার্ডেনের একেবারে বাইরে। স্কটিস গভর্মেন্টে এখানকার প্রত্যেক পাবলিক প্লেস মেন্টেন্স এর ব্যাপারে বেশ করা নজর। সারাদিনের একটা ছোট্ট ট্রিপের জন্য তারহিল বেশ ভালো জায়গা। তারহিল ফার্মের মোহময়ী লাভেন্ডানের আকর্ষণ এখানকার প্রত্যেক ভ্রমণ পিয়াসীদের কাছে বেশ প্ৰিয়।